মোহনবাগান ৩ (দীপেন্দু, শুভাশিস, কামিংস)
নর্থইস্ট ২ (বেমামের, আলাদিন)
ডুরান্ড কাপের ফাইনালে হারের প্রতিশোধ আইএসএলে নিল মোহনবাগান। সোমবার যুবভারতীতে নর্থইস্ট ইউনাইটেডকে ৩-২ গোলে হারাল তারা। দু’বার পিছিয়ে পড়েও জিতল তারা। ডুরান্ড ফাইনালে দ্বিতীয়ার্ধে দু’টি গোল হজম করেছিল তারা। পরে টাইব্রেকারে হারে। এ দিন দ্বিতীয়ার্ধে দু’টি গোল দিয়ে জিতল মোহনবাগান। চলতি আইএসএলে এটাই মোহনবাগানের প্রথম জয়। তবে জিতলেও মোহনবাগানের খেলা মন ভরাতে পারেনি। এখনও দলের মধ্যে খাপছাড়া ফুটবল লক্ষ করা গিয়েছে।
সবুজ-মেরুনের জয়ে অবদান রাখলেন দুই বঙ্গসন্তান। গোল করেছেন দীপেন্দু বিশ্বাস এবং শুভাশিস বসু। তরুণ দীপেন্দুর উপর বেশ কিছু দিন ধরেই আস্থা রয়েছে কোচ হোসে মোলিনার। আগের ম্যাচেও ভাল খেলেছিলেন তিনি। সেই দীপেন্দু গোল করে আস্থার দাম রাখলেন। অন্য দিকে, রক্ষণে খামতি থাকায় সমালোচনা হচ্ছিল শুভাশিসকে নিয়ে। তিনিও আপাতত সমালোচকদের মুখ বন্ধ করলেন। তবে মোহনবাগানকে এত কষ্ট করে জিততে হত না যদি লিস্টন নিজের সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পারতেন। একাধিক সুযোগ নষ্ট করার খেসারত দিতে হয়েছে বাগানকে।
নর্থইস্ট ম্যাচের প্রথম একাদশে একাধিক বদল করেছিলেন হোসে মোলিনা। মাঝমাঠ জমাট করার লক্ষ্যে এনেছিলেন আপুইয়াকে। আক্রমণে জেসন কামিংসের বদলে রেখেছিলেন গ্রেগ স্টুয়ার্টকে। প্রথম মিনিটেই মোহনবাগানের বার কাঁপিয়ে দিয়েছিল নর্থইস্ট। ডান দিক থেকে তোলা জিতিনের ক্রস পেয়েছিলেন আলাদিন। তাঁর শট পোস্টে লেগে ফেরে।
তবে প্রথম দশ মিনিটেই দু’গোল হয়ে যায়। ডান দিকের উইং থেকে দৌড়ে আলাদিন পাস দিয়েছিলেন মহম্মদ আলি বেমামেরকে। মরক্কোর বেমামের চলতি বলেই জোরালো শটে পরাস্ত করেন বিশাল কাইথকে। মোহনবাগান গোলকিপারের কিছুই করার ছিল না।
অবশ্য গোল শোধ করতে পাঁচ মিনিটও নেয়নি মোহনবাগান। বক্সের বাইরে ফ্রিকিক পেয়েছিল তারা। দিমিত্রি পেত্রাতোসের ফ্রিকিক পান দীপেন্দু। তাঁর হেড ধরতে পারেননি নর্থইস্টের গোলকিপার গুরমিত সিংহ। গোল খেয়ে আরও বেশি আক্রমণ শুরু করে নর্থইস্ট। বার বার মোহনবাগান বক্সে ঢুকে তাদের রক্ষণকে ব্যাতিব্যস্ত রাখতে থাকে।
সেই আক্রমণের ফলও পায় তারা। ২৪ মিনিটে এগিয়ে যায় হুয়ান পেদ্রো বেনালির দল। প্রতি আক্রমণ কী ভাবে করতে হয় তার একটি উদাহরণ হয়ে থাকতে পারে এই গোল। স্টুয়ার্টের বাঁকানো শট প্রতিহত হয় নর্থইস্ট রক্ষণে। সেখান থেকে বল পেয়ে জিতিন নিখুঁত পাস বাড়ান আলাদিন। তিনি আবার জিতিনকে ফেরত দেন। সেই বল নিয়ে মোহনবাগানের বক্সে ঢুকে আবার আলাদিনকে পাস করেন জিতিন। চলতি বলে শটে বিশালকে পরাস্ত করেন আলাদিন। এই গোলে প্রকট হয়ে ওঠে মোহনবাগানের রক্ষণের দৈন্যদশা। কেন শেষ মুহূর্তেও কেউ ট্যাকল করলেন না জিতিনকে, কেনই বা আলাদিনের শটের সময় টম অলড্রেড স্লাইড করলেন না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে।
গোল খেয়ে প্রথমার্ধেই সমতা ফেরাতে তেড়েফুঁড়ে আক্রমণে ওঠে মোহনবাগান। পেত্রাতোসের বল পেয়ে মনবীর হেড করেছিলেন। তবে গুরমিত তা কোনও মতে বাঁচিয়ে দেন। এর পর লিস্টনের পাস নিজের পছন্দের জায়গায় পেয়েছিলেন স্টুয়ার্ট। তাঁর শট গোললাইন থেকে বাঁচিয়ে দেন জাবাকো।
দ্বিতীয়ার্ধ শুরু হওয়ার একটু পর থেকেই বৃষ্টি নামে যুবভারতীতে। তার মধ্যেই দুই দল গোলের চেষ্টা করতে থাকে। সফল হয় মোহনবাগান। তবে সেই গোল নিয়ে হালকা বিতর্কও তৈরি হয়েছে। কর্নার থেকে অলড্রেডের হেড অনায়াসে ধরে ফেলতে পারতেন গুরমিত। কিন্তু সেই বল আঙুলের টোকায় উড়িয়ে দিতে চেয়েও পারেননি। উল্টে বৃষ্টিতে ভেজা মাঠে পা পিছলে পড়েন। গুরমিতের সামনে পেত্রাতোস থাকলেও গোল করতে পারেননি। গুরমিত বল ধরতে চান। তবে কিছুটা দূর থেকে শুভাশিস দৌড়ে এসে বল জালে জড়িয়ে দেন।
মোহনবাগানের খেলোয়াড়েরা উল্লাস করতে থাকলেও রেফারিকে ঘিরে ধরে তীব্র প্রতিবাদ করতে থাকেন নর্থইস্টের খেলোয়াড়েরা। গোলের ভিতরে মাটিতে পড়ে গুরমিত আঙুল চেপে কাতরাতে থাকেন। নর্থইস্টের দাবি, গুরমিত বল ধরে ফেলেছিলেন। শুভাশিস জোর করে সেই বল ধরে গোল করেছেন। তাঁরা ফাউলের আবেদন করলেও রেফারি কর্ণপাত করেননি। উল্টে হলুদ কার্ড দেখান বেমামেরকে। সাইডলাইনের ধারে কোচ বেনালিকেও উত্তেজিত দেখিয়েছে।
তবে রিপ্লে দেখে ধারাভাষ্যকারেরা বলেন, গুরমিত বলে হাত লাগালেও পুরোপুরি তা নিজের কব্জায় আনতে পারেননি। তা ছাড়া শুভাশিস গোল করার সময় গুরমিতকে আঘাতও করেননি। তিনি বলে শট মেরে গোল করার চেষ্টা করেন। সে কারণেই রেফারি গোল দিয়েছেন বলে অভিমত ধারাভাষ্যকারদের।
৭৮ মিনিটে পেত্রাতোসের জায়গায় নামেন জেমি ম্যাকলারেন। সবুজ-মেরুন জার্সিতে অভিষেক হয় তাঁর। একটি সুযোগ পেলেও শট বাঁচিয়ে দেন আশির আখতার। তার পরেই গোল করে মোহনবাগান। বাঁ দিক সাহালের বাড়ানো নিচু ক্রসে অরক্ষিত থাকা কামিংস শট মেরে গোল করেন।